ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১২ মাস ঘুরে জানুয়ারি আসে নতুন বছরের আবহ নিয়ে। এই দিনটিতে জীবনের পুরনো অধ্যায়কে বিদায় জানিয়ে নতুন লক্ষ্য স্থির করি আমরা। নতুন বছর উদযাপন একটি আনন্দঘন মুহূর্ত। নতুন বছর বা নিউ ইয়ার উদযাপন প্রতিটি দেশ বা জাতির কাছে একটি আলাদা আবহ নিয়ে আসে। নতুন বছর উপলক্ষে প্রায়শই আতশবাজি, ফানুস উড়ানোর মাধ্যমে থার্টিফার্স্ট নাইট উৎযাপন করা হয়।
অনেক সময় যুবক -যুবতীরা উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়েও দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। যা আমাদের সাময়িকভাবে আনন্দ দিলেও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। উচ্চশব্দের মিউজিক ও আতশবাজি ফোটানোর ফলে আশেপাশের মানুষের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। মধ্যরাতে আতশবাজি ফোটানোর ফলে এর উচ্চ শব্দে ছোট শিশুদের ঘুমের ক্ষতি করে।
আতশবাজির ধোঁয়া শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের। হাসপাতালে থাকা রুগীদের জন্য এটি ভোগান্তির সৃষ্টি করে। আতশবাজির উচ্চ শব্দ ও আলোর ঝলকানি আশেপাশের পশু-পাখির জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। রাতের বেলা পশু-পাখি আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে,মরেছে হাজার হাজার পাখি। যা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
উচ্চ শব্দে গান বাজানো পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি এই শব্দ দূষণ বন্যপ্রাণী এবং পাখিদের প্রাকৃতিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত শব্দ বন্যপ্রাণীর আচরণ পরিবর্তন করে এবং তাদের বাসস্থান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় পাখিরা ভয় পায় এবং প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শব্দে গান শুনলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ৭০ ডেসিবেল-এর বেশি শব্দ মানুষের কান এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক।
উচ্চ শব্দ মানুষকে মানসিকভাবে চাপগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাত, মাথাব্যথা, এবং মেজাজের তারতম্য দেখা দিতে পারে। নতুন বছরের উৎসবের সময় তরুণ প্রজন্ম উচ্চ শব্দে গান এবং পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর ফলে তাদের মধ্যে শ্রবণ সমস্যার পাশাপাশি একধরনের আসক্তি তৈরি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি তাদের মনোযোগ, পড়াশোনা এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়া আতশবাজি থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। বিশেষ করে ফানুস উড়ানো থেকে সহজেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। গত বছর গুলো তে আমরা দেখেছি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফানুস ওড়ানোর ফলে অগ্নিকান্ডের স্বিকার হয়েছে বিভিন্ন দোকান পাট ঘর-বাড়ি। এটি মানুষের জীবন এবং সম্পদের জন্য বড় হুমকি। নতুন বছর উদযাপন যেনো আমাদের প্রকৃতির উপর বিরুপ প্রভাব না ফেলে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
উচ্চশব্দের আতশবাজি ও দূষণ সৃষ্টি না করে প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে উদযাপন করা জরুরি। অহেতুক খরচের পরিবর্তে টাকাটি সঞ্চয় করা বা প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা উচিত। মদ্যপান বা অন্য কোনো নেশা উদযাপনকে আনন্দময় নয়, বরং ক্ষতিকর করে তোলে।এছাড়াও প্লাস্টিক ব্যবহার বা পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। পৃথিবীর বুকে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যা আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
প্রিয় নাগরিক সমাজ , বছরের প্রথম সপ্তাহেই নিশ্চয়ই আপনার উদযাপনের বিরূপ প্রভাব হিসেবে আপনি এরকম কোন আকস্মিক ঘটনা সংবাদপত্র কিংবা টিভি নিউজে দেখতে চাইবেন না। আমরা যদি আনন্দের পাশাপাশি সচেতন থাকি, তবে আমাদের উদযাপন হবে সবার জন্য নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। নতুন বছর উদযাপন হোক আনন্দময় এবং সবার জন্য নিরাপদ। শব্দ ও পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থেকে প্রাকৃতিক ও সৃজনশীল উপায়ে আনন্দ করার চেষ্টা করুন।
আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর পরিবর্তে আলো দিয়ে ঘর সাজানো বা প্রিয়জনদের সঙ্গে একত্রে বসে গল্প করার মাধ্যমে উদযাপন হতে পারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সেই সাথে ৭০ ডেসিবেল-এর নিচে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত। নতুন বছর হোক সুস্থ, সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব উদযাপনের প্রতীক।”একটি সুন্দর পরিবেশের জন্য আসুন আমরা দায়িত্বশীল হই।” শুভ নববর্ষ ২০২৫।
লেখক : শিক্ষার্থী, মৃৎশিল্প ভাস্কর্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়