আধুনিক সমাজে কর্মজীবী নারীদের ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। ঘর সামলানোর পাশাপাশি অফিস, ব্যবসা বা পেশাগত দায়িত্ব সামলে তারা নতুন এক চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষত কর্মজীবী মায়েদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরো জটিল, কারণ তাদের সন্তান পালনের দায়িত্বও একই সঙ্গে সফলভাবে সামলাতে হয়। এই দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা যে মানসিক ও শারীরিক চাপের মুখোমুখি হন, তা অনেক সময় সমাজে তেমনভাবে আলোচিত হয় না।
কর্মজীবী মায়েদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা। অফিসের নির্ধারিত সময় ও কাজের চাপ সামলে সন্তানের সঠিক যত্ন নিশ্চিত করা তাদের জন্য সহজ নয়। অনেক সময় মায়েরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না, ফলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।

তদুপরি, সমাজের কিছু প্রচলিত ধ্যানধারণা তাদের পথ আরও কঠিন করে তোলে। আমাদের সমাজে এখনো এমন একটি প্রবণতা বিদ্যমান যে, সন্তান পালনের দায়িত্ব শুধু মায়ের। ফলে কর্মজীবী মায়েরা যদি তাদের সন্তানকে পুরো সময় দিতে না পারেন, তবে তাদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ধরনের মানসিক চাপ কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।
কর্মজীবী মায়েদের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, নিরাপদ ও মানসম্মত শিশু যত্নের ব্যবস্থা। অনেক কর্মজীবী মায়েরই সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না, এবং দেশের বেশিরভাগ কর্মস্থলে শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারের অভাব রয়েছে। ফলে সন্তানকে রেখে কর্মস্থলে মনোযোগ দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তবে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এই সমস্যাগুলোর সমাধানও রয়েছে। প্রথমত, সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়াতে পারলে কর্মজীবী মায়েরা তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনতে পারবেন। একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে কাজ করা সময় ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, কর্মস্থলে মায়েদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, মাতৃত্বকালীন ছুটির সঠিক বাস্তবায়ন এবং মায়েদের জন্য কর্মঘণ্টার নমনীয়তা নিশ্চিত করলে তাদের চাপ অনেকটাই কমে যাবে।
তৃতীয়ত, পরিবারের সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান লালনপালন শুধু মায়ের দায়িত্ব নয়; বরং এটি পরিবার এবং পিতারও সমান দায়িত্ব। এই সচেতনতা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
কর্মজীবী মায়েদের নিজেদের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল না হলে কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবন উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যোগব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত বিশ্রাম তাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
কর্মজীবী মায়েরা সমাজের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কর্মক্ষেত্র ও পরিবার যদি একসঙ্গে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তবে তারা আরো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবেন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন।
লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়