বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্য আমাদের আঙুলের ডগায়। স্যোশাল মিডিয়া, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও অন্যান্য প্ল্যাটফরম থেকে প্রতিমুহূর্তে আমরা নতুন নতুন তথ্য পেয়ে থাকি। যার মধ্যে সব তথ্য সঠিক নয়। এই তথ্যের মধ্যে সত্য ও মিথ্যা মিশে আছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মুহূর্তের মধ্যেই ভুয়া তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে পড়ছে বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে। যার ফলে সমাজে বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা, উত্তেজনা ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে।
ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে গুজব একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বহুল বিস্তারের কারণে তথ্যের সঠিকতা যাচাই না করেই বিভিন্ন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ ফটো কার্ডের অনুকরণে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর অপতথ্য ও গুজবে ফেসবুকের নিউজফিড সয়লাব হতে দেখা যায়। জাতীয় সংকটের সময় গুজব ছড়ালে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। তাই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্থাৎ, ৫ আগস্টের পর থেকে গুজব বেশি ছড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে অতিরঞ্জিত, মিথ্যা ও ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারত ও আমেরিকার মিডিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘর্ষে চার জনের নিহতের ঘটনা ভারতীয় গণমাধ্যমে ১০০ জন নিহত হয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই করা আমাদের দায়িত্ব। গুজব থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করার জন্য তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। তথ্যটি কোথা থেকে এসেছে, কোনো বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কি না, সরকারি ওয়েবসাইট থেকে এসেছে কি না, এসব তথ্য যাচাই ও বিভিন্ন সূত্র থেকে ক্রস চেক করতে হবে।
গুজব বা মিথ্যা তথ্যে সাধারণত উগ্র শিরোনাম ভয় বা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য অতিরঞ্জিত, আবেগপ্রবণ ভাষা ব্যবহার করা হয়, শিরোনাম হয় আকর্ষণীয়। গুজব যাচাই করতে ফ্যাক্ট চ্যাকিং ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে Factly, BOOM, Alt News, Snopes, Reuters Fact Check ইত্যাদি। ছবি বা ভিডিওর প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করতে Google Reverse Image Search বা InVID টুল ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমানে গুজব ছড়ানোর ঘটনা ডিজিটাল বিপ্লবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। গুজব, বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়কে নিয়ে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য সমাজে অস্থিরতা, সহিংসতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে প্রচুর গুজব ছড়ানো হয়েছে, যার ফলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
গুজবের প্রভাব শুধু ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করে। তাই কোনো সংবাদ দেখলে সবার আগে উচিত বিশ্বাসযোগ্য আরেকটি সূত্র থেকে সেটা যাচাই করে নেওয়া। তথ্য যাচাই করার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি গুজব রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়