মূলধারা রিপোর্ট
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নদী পাড়ের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ির চালক-হেলপাররা।
জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ১৭টি ছোট-বড় ফেরি থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে ১২টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে ৬টি রো-রো ফেরি ও ৬টি ইউটিলিট-কেটাইপ ফেরি। দৌলতদিয়া ঘাটের ৩, ৪ ও ৭নম্বর ঘাট দিয়ে সার্বক্ষণিক যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে নৌরুটের ফেরি চলাচলের চ্যানেলেগুলোর বিকন বাতি ও মাকিং পয়েন্ট দেখা যায় না। এ সময় অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতেই সাময়িক সময়ের জন্য ফেরি বন্ধ রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে কুয়াশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে বিআইডব্লিউটিসি ঘাট কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সোয়া ৭ঘন্টা পর কুয়াশার ঘনত্ব কমে আসলে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে পূনরায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০মিনিট থেকে বুধবার সকাল ৮টা ৪০মিনিট পর্যন্ত টানা ৮ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। টানা ৮ঘন্টা ফেরি বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এক লাইলে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার ভ্যান নদী পাড়ের অপেক্ষায় থাকে। একই ভাবে ঘন কুয়াশার কারণে গত সোমবার ভোর ৬টা ২০মিনিট থেকে সকাল ৮টা ২০মিনিট পর্যন্ত ২ঘন্টা বন্ধ রাখা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌরুটের দৌলতদিয়ার ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ফেরি ঘাটে নোঙর করা ফেরিগুলোতে নদী পাড়ের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী ও যানবাহনগুলো উঠছে। নৌরুটে ফেরি চালু হবার পর অগ্রাধিকার দিয়ে জরুরী সেবা এ্যাম্বুলেন্স, যাত্রবাহী বাস ও পচনশীল পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলোকে আগে পাড় করা হচ্ছে। অপর দিকে অপচনশীল ট্রাক ও কাভার ভ্যান সিরিয়াল ধরে ফেরিতে উঠে পাড় হচ্ছে। নৌরুটে ফেরি বন্ধ থাকলেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ১/২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বা এর অধিক এলাকায় যাত্রীবাহী বাস (নাইট কোচ), পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার ভ্যান নদী পাড়ের অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষায় থাকা যানবাহন যাত্রীবাহী বাসে বয়স্ক, শিশু, নারী যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও হেলপাররা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এক বাসের যাত্রী আব্দুস সালাম ও নুরুল ইসলাম বলেন, রাত ২টায় দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে নদী পাড়ের অপেক্ষায় লাইনে দাড়ায় বাসটি। ঘন কুয়াশার কারণে নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এতে রাত আড়াইটা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ফেরি ঘাটে আটকা পড়ে আছি। কখন যে বাস ফেরিতে উঠবে আর নদী পাড় হবে তা জানি না।
পণ্যবাহী ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম ও কাভার ভ্যান হেলপার আলম বেপারী বলেন, দীর্ঘদিন পর দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়ি নিয়ে নদী পাড়ের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি। একদিকে প্রচন্ড শীত আর অন্য দিকে ফেরি বন্ধ। আগের মতো বর্তমানে ঘাটে নেই হোটেল রেষ্টুরেন্টে খাবার ব্যবস্থা। সস্তা খাবার বাড়তি দামে কিনে খেতে হচ্ছে ট্রাক চালক ও হেলপারদের। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে নৌরুটে দূর্ঘটনা এড়াতে কিছু সময় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। নদীতে কুয়াশার ঘনত্ব কমে আসলেই পুনরায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে এ নৌরুটে ১৭টি ফেরি থাকলেও যানবাহন কম থাকায় ১২টি ফেরি সার্বক্ষণিক যানবাহন পারাপারে কাজ করছে।