দেশের সাধারণ নাগরিকরা এমন একটি সরকার ও সরকার ব্যবস্থা চায় যারা জন মানুষের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার হচ্ছে জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। একটি সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। আমাদের দেশের বিদ্যমান সংবিধান মোতাবেক জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলই দেশ শাসন করবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবার জন্য একমাত্র বৈধ পথ হচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়া। যে দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পাবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এটাই প্রত্যাশিত।
একটি রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তখন জনগণের কাছে অঙ্গিকার করে তারা নির্বাচিত হলে কি কি কাজ করবে। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি অঙ্গিকার বিবেচনায় নিয়ে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে। একটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করার পর জনগণ দেখতে চায় তারা যে নির্বাচনি অঙ্গিকার করেছিল তা কতটা বাস্তবায়ন করছে। বা তারা তাদের ঘোষিত অঙ্গিকার বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিক। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারগণ সরকারের কৃত অঙ্গিকার বাস্তবায়নে সফলতার উপর ভিত্তি করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনেকদিন ধরে আমরা এই প্রক্রিয়া ভুলতে বসেছি।
বর্তমানে আমরা যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করছি তা সাধারণ কোনো সরকার ব্যবস্থা নয়। ইতিপূর্বে আমরা বেশ ক’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল নির্দিষ্ট সময়ে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।
কিন্তু বর্তমানে আমরা যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করছি তা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ নতুন একটি সরকার ব্যবস্থা। ব্যপক ছাত্র-জনতার অংশগ্রহনে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আগের সরকারের পতন ঘটলে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
এ সময় আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছিল যে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যেন আর ফিরে না আসতে পারে তার ব্যবস্থা করা। একই সাথে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া ।
কাজেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাথে সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে তা চিহ্নিত করে কাজ শুরু করবে এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে ফিরে না আসতে পারে তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে শাসকরা সাংবিধানিক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে যেভাবে দলীয়করণ করে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোঁতা করে ফেলেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর নির্মাণে রূপরেখা তৈরি করবে।
অতীতে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি একটি স্বৈরচারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ করলেও আবারো অন্য একটি স্বৈরাচারি ব্যবস্থা আমাদের উপর জেঁকে বসে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ যে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিবর্তন করে তা অর্জিত হয় না। এক স্বৈরাচারি ব্যবস্থার পতন ঘটলে আর একটি স্বৈরাচার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। বিশেষ করে অর্থনীতির ভিত্তিটা কি তার উপর সরকারের আচরণ অনেকটাই নির্ভর করে। দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতি বিদ্যমান থাকলে তার উপর দাঁড়িয়ে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি সৃষ্টি হয়। আর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিকে পাহাড়া দিতে গেলে একটি সরকারকে স্বৈরাচারি হতে হয়।
দেশে বেশ কিছু বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থাকে যারা সরকারকে স্বৈরাচারি আচরণ করা থেকে বিরত রাখে। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখে, সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের নিকট তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হয়। এভাবে এসব বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যদি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে পারে তাহলে তারা কিছুটা হলেও জনকল্যাণে অবদান রাখতে পারে।
কিন্তু আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখেছি, এসব বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে অকার্যকর বা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। অতীতে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করেছে।এসব প্রতিষ্ঠানকগুলোকে যাতে পুনর্গঠন করে জনকল্যাণে ব্যবহার করা যায় অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের একটি অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ চিন্তকদের সাথে আলোচনা করে সেই পথের নির্দেশ করা।
ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম স্লোগান ছিল বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কাজেই অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের সকল স্তরে বিদ্যমান বৈষম্য যথাসম্ভব দূরীভূত করার পথে হাটা। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার কিছু সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন করবে এবং সুপারিশ প্রদান করবে। ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই সুপারিশ সমূহ গ্রহণ করা গেলে, আগামী সরকারকে বা সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করাতে প্রচেষ্টা নেওয়া যাবে।
এ বিষয়েেঐক্যমত থাকলে সাধারণভাবে বলা যাবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই সব সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। কিছু কিছু কাজ আছে যা অন্তর্বর্তীকালিন বা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য নির্বাচিত সরকার ও পার্লামেন্টের প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে আমরা যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার প্রত্যক্ষ করছি তা বিপ্লবী সরকারও নয় আবার নিয়মিত সরকারও নয়। কাজেই তাদের কার্যক্রমের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা বুঝেই বর্তমান সরকারকে তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।
আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরিই ধ্বংস হয়ে গেছে। বিগত অন্তত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ২০১৪,২০১৮ এবং ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচন ছিল পুরোপুরি বিতর্কযুক্ত এবং এসব নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সাধারণ মানুষ ক্রমশ নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়ছে। কাজেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার অন্যতম প্রধান কাজ হবে এমন একটি নির্বাচনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটে দাঁড়াতে পারবে ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কোনো শক্তিই যাতে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার যখন আলোচনায় বসেছিল তখন আমরা বলেছি, আপনারা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য কি কি উদ্যোগ নিতে চান বা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান তার একটি সঠিক রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। এ জন্য রাজনীতিবিদ ও সমাজ চিন্তকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। সেই আলোচনার ভিত্তিতে এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলুন যাতে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হতে না পারে। সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করুন এবং সম্ভব হলে কিছু কিছু সংস্কার কার্যক্রম শুরু করুন। আপনারা হয়তো পুরো সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন না। সেটা আপনাদের দায়িত্বও নয়। আপনারা সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করুন। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।
অন্তর্বর্তীকালিন সরকার মূল দায়িত্ব হবে সংস্কারের সূচনা করা। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার আমাদের এই অভিমতের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। কিন্তু এই সরকারের একশত দিন অতিবাহিত হতে চললো এখনো পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালিন সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরাসরি আলোচনার কোন উদ্যোগ দেখছি না।
অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের গত কয়েক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে আমরা বলতে পারি, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যমত্যের পথে চলার যে আকাঙ্খা ছিল তা এখনো পুরণ হয়নি। একটি চলমান সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা। এর আগে এক দশক ধরে স্বৈরাচারি সরকার দায়িত্ব পালন করেছে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল। ছিল অসন্তুষ্ট। আর সে কারণেই তারা সেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুৎ করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালিন সরকার জনমনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তেমন একটা সাফল্য প্রদর্শন করতে পারছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। নিত্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত হয় বাড়েনি। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সাফল্য প্রদর্শন করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের তেমন কোনো দৃঢ় পদক্ষেপও প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার এখনো তেমন কোনো প্রত্যাশার আলো দেখাতে পারছে না। অর্থাৎ দুঃখজনক হলেও এটা বলতে হয় যে, একশত দিনে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার জন আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেনি। এমনকি এ ক্ষেত্রে তারা কোনো পথরেখাও দেখাতে পারছেন না।
এতকিছুর পরও আমরা আশা করবো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার গণ আকাঙ্খা পূরণে এগিয়ে যাবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার শুরতেই বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ডের মধ্যে ঢুকে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে যে দুর্ভেদ্য ঐক্য গড়ে উঠেছিল ইতিমধ্যেই তাতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চাইছে। সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলার মধ্য দিয়ে নানাবিধ বিতর্কের সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে কেনো? আমাদের এই সংবিধানে অনেক অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এসব কথা আমরা ১৯৭২ সালেই বলেছি। এরপর অনেক সংশোধনী হয়েছে কিন্তু ওই অসম্পূর্ণতা দূর করা যায়নি। তাই সংবিধানের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংবিধানের অসম্পূর্ণতা দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করতে হবে ।
কেউ কেউ সংবিধানকে একটি বিশেষ দলের সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। এতে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের আসল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কি? এমন কিছু বিতর্কিত বিষয়ের ও কার্যক্রমের অবতারণা করা হচ্ছে যাতে মানুষ এই সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ছে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের মধ্যে থাকা কেউ যাতে কোনো বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রধান প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ। আমরা এমন একটি পরিবেশ চাই যেখানে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। বিগত সরকার আমলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়েছিল। সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল।
মূলত এসব কারণেই ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল এবং শেষ পর্যন্ত সরকারকে লজ্জাজনকভাবে বিতাড়িত হতে হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারে মূল দায়িত্ব হচ্ছে এমন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যেখানে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করা। এ জন্য এমন একটি নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে যেখানে সরকার চাইলেই যেন জনগণের ভোটাধিকারকে খর্ব করতে না পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সর্বোপরী ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্খা তা বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে স্বৈরাচারকে আমরা বিদায় করলাম এই স্বৈরাচার কিন্তু শুধু ব্যক্তি মাত্র নয়। স্বৈরাচার একটি ব্যবস্থা। তারা সেই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করবে। দীর্ঘদিন সমাজে ভয়ের রাজত্ব কায়েম থাকার কারণে অগণতান্ত্রিক এবং অপশক্তি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। আগামীতে যাতে এই অপশক্তি আরো বেশি মাত্রায় জাগ্রত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে না পারি ,সরকার যদি দেশবাসির আকাঙ্খা পূরণ করতে না পারে তাহলে বিদেশি শক্তি বাংলাদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।