একটি স্বাধীন দেশের পতাকা সেই দেশটির সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই পতাকা সেই দেশ তথা রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে। তেমনি আমাদের দেশের স্বাধীনতার প্রতীক, লাখো শহীদের বুকের তাজা রক্তের অর্জন হচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা।
পতাকাকে সম্মানের পাশাপাশি সঠিক নিয়মে উত্তোলন কিংবা এর সঠিক মাপে তৈরি ও সঠিকভাবে ব্যবহার করাও প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত বিধি-বিধানও রয়েছে। কিন্তু আমরা তা অনেকে জানি না, যা দুঃখজনক। যেই পতাকার জন্য লাখো শহীদ নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন, তার মান অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। যে বিজয় ছিনিয়ে আনতে লক্ষ্য মানুষ তাদের প্রাণ দিয়েছেন, তাদের চাওয়া ছিল নিজস্ব একটি ভূখণ্ড, নিজস্ব পরিচয় ও নিজস্ব একটি পতাকা অর্জন করা। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সারা দেশ জুড়ে থাকে নানা আয়োজন। এই আয়োজনকে ঘিরে অনেকে নানাভাবে তৈরি করেন জাতীয় পতাকা। আয়োজন শেষে লক্ষ্য করা যায় রাস্তাঘাট, মাঠ, ফুটপাতসহ বিভিন্ন জায়গায় পদদলিত হয় আমাদের জাতীয় পতাকা। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সকলের উচিত পতাকার মাপ থেকে শুরু করে পতাকার রং, পতাকা উত্তোলনের নিয়ম ইত্যাদি সকল কিছু ভালোভাবে জেনে অনুষ্ঠান আয়োজন করা এবং আয়োজন শেষে সম্মানের সঙ্গে আমাদের পতাকাকে সংরক্ষণ করা।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গাঢ় সবুজ রংয়ের আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে একটা ভরাট রক্তিম বৃত্ত নিয়ে তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘে্যর ৫ ভাগের একভাগ। পতাকা টানানোর সময় পতাকার অবমাননা হয় এমন জায়গায় তা না টানানোর ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। দুটি পতাকা উত্তোলন করার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ডানদিকে উত্তোলন করতে হবে। বাংলাদেশের পতাকার উপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। যেসব ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় শেষে নামাতে হবে। যে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে পতাকা সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে, তারপর নামিয়ে অর্ধনমিত অবস্থায় রাখতে হবে। পরবর্তীতে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় সর্বোচ্চ স্থান পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে, তারপর নামাতে হবে।
উল্লেখ্য, ‘পতাকা’ কোনো ব্যক্তি বা জড়বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না। ‘পতাকা’ সর্বদাই ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকবে। পতাকাকে কখনও পদদলিত করা যাবে না। কোনো কিছু গ্রহণ, বহন বা ধারণ করার জন্য ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাবে না। ‘পতাকা’ দ্রুত উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় সম্মানের সঙ্গে নামাতে হবে। পতাকার অবস্থা যদি এমন হয় যে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না বা নষ্ট হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে।
আসুন, আমাদের জাতীয় পতাকাকে তার যথাযথ মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। পতাকার মান অক্ষুন্ন রেখে দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী