উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃত্তি, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও পরিবেশগত ভারসাম্য একত্রে বজায় রাখার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রেখে পরিকল্পিত উন্নয়নই হলো টেকসই উন্নয়ন।
সমাজ, পরিবেশ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি—এই চার স্তম্ভের ওপর ভর করেই টেকসই উন্নয়নের মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। টেকসই উন্নয়ন হলো ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে ক্ষমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে ‘রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী : ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ শিরোনামে প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে।
পৃথিবীর সব দেশ এ লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রথম পদক্ষেপ দারিদ্র্য বিমোচন। সেক্ষেত্রে যার যার যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজার। এই সংখ্যাটা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে এবং পাশাপাশি টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা উন্নয়নের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ দূষণ। দূষণের ফলে উষ্ণায়নের পাশাপাশি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মাঝে মাঝে অনিয়মিত বন্যা ও খরা দেখা দিচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং জনজীবন হুমকির মুখে পড়ছে। তৃতীয়ত, উন্নত প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত থাকা টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত। এই সংখ্যা একটি দেশের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতা প্রকাশ করে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। চতুর্থত, চিকিৎসা খাতে চরম ঘাটতি। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ১ হাজার ৬৬৭ জন রোগীর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন এক জন। তাছাড়াও কোভিড ১৯-এর মহামারি বাংলাদেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থা দুর্বলতা আরো গভীরভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, অতিদরিদ্র ও দারিদ্র্যের হার কমাতে প্রয়োজনে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। নীতিকাঠামো বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে, যাতে আর্থসামাজিক অগ্রগতি ন্যায্যভাবে সুবণ্টিত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এসব খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও তদারকি বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন ও জাগরণ ঘটাতে হবে। জ্বালানি খাতকে বর্তমান বাজেটে অগ্রাধিকার দিলেও তা বাস্তবায়নে কঠোর তদারকি প্রয়োজন। গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্থলভাগ ও সমুদ্র অনুসন্ধান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে নবায়নযোগ্য ও গ্রিন জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। এতে পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাও সহজ হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ