কয়েকদিন আগে শপিং মলে গিয়ে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। কসমেটিকসের পণ্যের ওপর অফার—কম দামে মাত্র ২৫০ টাকায় ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কমপ্যাক্ট পাউডার বিক্রি হচ্ছিল। সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও দাম বিবেচনায় কিনলাম অনেকগুলো প্রোডাক্ট। কিন্তু ব্যবহার করার পর বুঝলাম কম দামে নকল পণ্য গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নারীদের সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধনীর চাহিদা ব্যাপক। যার ফলে আসল পণ্যের পাশাপাশি নকল পণ্য দিয়ে বাজার সয়লাব। অনেকেই হয়তো আসল দামেই নকল পণ্যটি ক্রয় করে কিন্তু তারা জানতে বা বুঝতে পারে না যে পণ্যটি নকল। সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম, ময়েশ্চারাইজার থেকে শুরু করে আইলাইনার, মাশকারা, ফাউন্ডেশন, কনসিলার, লিপস্টিকসহ সবকিছুতেই নামি-দামি ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বিক্রি করা হয়। মাঝে মাঝে শপিং মলগুলোতে চলে কম্বো অফার। যার মোহে পড়ে তরুণীরা গাদা গাদা নকল পণ্য দিয়ে ড্রেসিং টেবিল ভরতি করে ফেলে এবং ব্যবহারজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে।
নকল প্রোডাক্ট ব্যবহার অনেক ভয়াবহ। নকল পণ্য ত্বকে ব্যবহারের ফলে ত্বকে তাত্ক্ষণিক জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে। অ্যালার্জি, চুলকানি, লাল দাগ বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। নকল পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ বা র্যাশ তৈরি করে। ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে কালো বা সাদা দাগ দেখা দিতে পারে অথাত্ পিগমেন্টশন হতে পারে। আবার কেমিক্যাল বার্নের ফলে ত্বকে স্থায়ী ক্ষত হতে পারে। নকল পণ্য ব্যবহারে চোখে জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব বা ইনফেকশন হতে পারে। নকল শ্যাম্পু বা হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে এবং চুলের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। নকল কসমেটিকসে ব্যবহূত ফরমালডিহাইড, ভারী ধাতব (যেমন লেড, আর্সেনিক) উপাদান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্ষতিকর রাসায়নিক হরমোনের প্রভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। নিম্নমানের প্রোডাক্ট থেকে ছত্রাক, ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। তাই যে কোনো পণ্য কেনার জন্য নিদিষ্ট ঐ ব্র্যান্ডের আউটলেটে গিয়ে কেনা উচিত। প্রায় সব ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আছে। সেখানে চেক করে নিতে হবে কোথায় কোথায় তাদের অনুমোদিত দোকান রয়েছে। অনুমোদিত দোকান থেকে পণ্য কিনলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেক ক্রেতা বড় দোকান দেখেই পণ্য ক্রয় করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটা একদমই উচিত নয়।
আসল-নকল পণ্য চেনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো পণ্যের প্যাকেজিং দেখে চেনা। যদিও বর্তমানে নকল পণ্যের মোড়কের সঙ্গে আসল পণ্যের মোড়কের তেমন পার্থক্য দৃশ্যমান হয় না। তবে প্যাকেজের রং, ফন্টের সাইজ, ধরন, আকার, লোগো ও হলোগ্রাম দিয়ে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই আসল পণ্যটি পাওয়া সম্ভব। যদি একই পণ্য কম দামে বিক্রি করা হয়, তবে কোনো রকম যাচাই বাছাই ছাড়াই পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রোডাক্ট আসল কি নকল তা বোঝা যাবে যদি পণ্যের বার কোডের প্রথম তিনটা ডিজিট উত্পাদনকারী দেশ বা ব্র্যান্ডের কোডের সঙ্গে মিলে যায়—তাহলে পণ্যটি আসল।
কসমেটিকসের উত্পাদন, আমদানি, রপ্তানি, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিতরণ ও মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালে কসমেটিকস আইন পাশ করা হয়। ঐ আইনের পঞ্চম অধ্যায় কসমেটিকসের লাইসেন্স সম্পর্কে বলা হয়েছে—কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিকট হতে লাইসেন্স আরোপিত শর্ত বহির্ভূতভাবে কসমেটিকস উত্পাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে না। আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের মান নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োগ, পরীক্ষাগার ইত্যাদি বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারণ করতে এক্ষেত্রে এতদ্বিষয়ক বিদ্যমান বাংলাদেশর মান, EU, USFDA ও ASEAN সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ কর্তৃক নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে হবে।
আইনে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া অথবা লাইসেন্স আরোপিত শর্তের বাইরে গিয়ে কসমেটিকস উত্পাদন বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ্ল বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদ্ল বা উভয় দ্ল হবে। বিধি লঙ্ঘন করে কোনো বিউটি পার্লারে কসমেটিকস ব্যবহার করলে তিন মাসের জেলসহ অর্থদ্ল দেওয়া হবে। এছাড়াও কোনো বিজ্ঞাপনে কসমেটিকসের ব্যবহারজনিত ফলাফল অসত্য প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ্ল। তাই নকল প্রসাধনী উত্পাদন ও বিক্রির আগে এ সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত।
লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়