প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আজকের বিশ্বে বিশেষত উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য অক্সিজেনস্বরূপ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত হয়, তখন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স হয়ে ওঠে অপরিহার্য চালিকাশক্তি। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বিদেশে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা দীর্ঘকাল ধরে যে সকল অভিযোগ করে আসছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘পাসপোর্ট জটিলতা’। বিশেষ করে পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ভোগান্তির বিষয়টি প্রায়শ দৃষ্টিগোচর হয়। সম্প্রতি সমস্যাটি প্রকটতর হয়ে উঠেছে। অবস্থা এতোটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, সঠিক সময়ে পাসপোর্ট হাতে না পেলে বিশ্ব শ্রমবাজার হতে দেড় লক্ষাধিক বাংলাদেশী প্রবাসী ছিটকে পড়তে পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসা নবায়ন করতে না পারলে সম্মুখীন হতে পারেন গ্রেফতার ও জেল-জরিমানার। এতে তাদের দেশে ফেরত আসতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজার।
উপযুর্ক্ত সমস্যার কারণ হিসেবে সম্প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, এমআরপির (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপার ঘাটতি ও এমআরপির প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ হতে পাসপোর্ট ছাপানোর কাজ বিলম্ব হচ্ছে। ফলে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও কাতার—এই তিনটি বড় শ্রমবাজারে বাংলাদেশি প্রবাসীরা পাসপোর্ট নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় পোহাচ্ছেন সীমাহীন দুর্ভোগ। ইতিমধ্যে অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। এই জটিলতা রাতারাতি সৃষ্টি হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করার পরও এ জটিলতা হতে পরিত্রাণ মিলছে না! অনেক প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় পাসপোর্ট নবায়ন করতে না পারলে তারা বিদেশ‘ অবৈধ‘ হিসেবে গণ্য হবেন এবং এতে তাদের বহুবিধ সমস্যা ও হয়রানি আরো বাড়বে।
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর ভাষ্য, ‘ঢাকায় প্রিন্টিংয়ের সমস্যার কারণে এমআরপি পাসপোর্ট আটকে রয়েছে। তবে চালু আছে ই-পাসপোর্ট। অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করলেই আমরা ই-পাসপোর্ট নিবন্ধন করিয়ে দিচ্ছি।’ মূলত ঘোরতর সমস্যা রয়েছে এখানেও! কারণ, দেখা গেছে—যারা ই-পাসেপোর্ট নিবন্ধন করতে আসছেন, তাদের বেশির ভাগেরই তথ্যে গরমিল রয়েছে। ফলে তারা ই-পাসপোর্টও করতে পারছেন না। এমন একটি অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ হলো, বাংলাদেশ সরকার যদি প্রবাসীদের এমআরপির মতো ই-পাসপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।
পাসপোর্ট নবায়নে সব সময় সমস্যা হয় বা সব প্রবাসী সমস্যার সম্মুখীন হন, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া প্রবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন প্রবাসীর নিকট কিছু থাকুক না থাকুক, পাসপোর্ট থাকা চাই। ভিসা বা পারমিটের জন্যও পাসপোর্ট থাকা অপরিহার্য। অর্থাৎ, পাসপোর্টের কোনো বিকল্প নেই। এই অর্থে, প্রবাসীদের জন্য রাষ্ট্রের এক নম্বর সেবা হলো ‘পাসপোর্ট’। আর এজন্য প্রত্যেক প্রবাসীর জন্য পাসপোর্ট সহজলভ্য করা রাষ্ট্র বা সরকারের এক নম্বর প্রায়োরিটি তথা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কোনো প্রবাসীই যেন পাসপোর্ট পেতে অযথা সমস্যার সম্মুখীন না হন, এমন উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন অতিব জরুরি। আমাদের দূতাবাসগুলোতে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল পাস নিতে আসা প্রবাসীরা যেন কোনোভাবে হেনস্তা শিকার না হন, সেই দিকেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বর্তমানে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন সংক্রান্ত যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। অবিলম্বে এই সংকটের সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।