মো. সাইফুল মিয়া
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তাজরিয়ান আহমেদ সোয়ারা নামের এক শিক্ষার্থী ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। তার বাসায় একটি চিরকুটে লেখা ছিল ‘আই অ্যাম সরি, আই ফেইল্ড অ্যাজ আ হিউম্যান’। জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহের কারণে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন তিনি। মূলত বাবা—মার সম্পর্কে অবনতি তার আত্মহত্যার কারণ। বাবা পরকিয়ায় লিপ্ত ছিলেন এবং তিনি তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইতেন না। এসব কারণে সোয়ারার মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে। একপর্যায়ে ডিপ্রেশনের চরম পর্যায়ে আত্নহত্যা করে দুনিয়ায় জীবনের সমাপ্তি ঘটেও তার। সন্দেহ নেই, তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি হারিয়েছে এক মেধাবী শিক্ষার্থীকে। এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণীয় নয়।
আত্নহত্যা কোনো নতুন বিষয় নয়। প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মানুষ আত্নহত্যা করছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। দেশের ভবিষ্যতের জন্য এই প্রবণতা নিসন্দেহে অশনিসংকেত।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো, সম্পর্কের অবনতি, পারিবারিক জটিলতা, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা ও আর্থিক সংকট ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যেরে সুরক্ষার জন্য কাউন্সেলিং সেন্টারের বিশেষ প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মানসিক কাউন্সেলিংয়ের তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
বর্তমান যুগে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের নানা চাপ, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা তাদের শিক্ষাগত এবং সামাজিক জীবনকে বিভিন্ন সময় বিপর্যস্ত করে তোলে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক কাউন্সেলিং ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারেন। নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ, সমস্যা সমাধানের কৌশল শেখা এবং মানসিক চাপ মোকাবিলায় সহায়তা পান। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক কাউন্সেলিং সেবা চালুর বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
শিক্ষার্থীদের আত্নহত্যার ঘটনা নিসন্দেহে অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর এহেন মর্মান্তিক পরিণতি আমাদের বুঝিয়ে দেয়, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা মানুষের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থা আরও সহজলভ্য করা। মনে রাখা জরুরি, মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলা এবং সহায়তা চাওয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়। কাজেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তি যেন সহজেই কাউন্সেলিং সহায়তা নিতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।
গবেষণায় জানা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে আরও সক্রিয় থাকে। শিক্ষার গুণগত মানবৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি প্রচারণা চালাতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক কাউন্সেলিং সেন্টার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, শিক্ষকদেরও উচিত শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে এগিয়ে আসা। একটি সুস্থ ও সৃজনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে, আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করতে এর কোনো বিকল্প নেই।