বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রথম দফায় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। আর দ্বিতীয় দফায় গঠন করা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, শ্রম সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। ৯০ দিনের মধ্যে এই ১১টি কমিশনকে সরকারপ্রধানের নিকট প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এর বাইরে গঠন করা হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। ইতিমধ্যে ৩০টি অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রের খসড়া প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিকট পেশ করেছে এই কমিটি। উপর্যুক্ত পরিস্থিতি হতে বোঝা যায়, দেশে এখন সংস্কারকর্মযজ্ঞ চলছে। চলতি ডিসেম্বর মাস নাগাদ বা আগামী বছরের শুরুতে বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশমালা প্রণয়ন সম্পন্ন হবে।
এ সকল সুপারিশ প্রণয়ন নিঃসন্দেহে অনেক মেহনত বা শ্রমসাধ্য বিষয়, কিন্তু তাদের এই পরিশ্রম বৃথা যাবে, যদি এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো রাজনৈতিক বাহন না থাকে। প্রকৃতপক্ষে কোনো কিছুর সুপারিশ করা যত সহজ, তার বাস্তবায়ন করা তত সহজ নয়। তাই দেশে যে রিফর্ম বা সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়ন করা হচ্ছে, তা খুবই ভালো কথা; কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংস্কার কে বাস্তবায়ন করবেন?
আমরা ধরে নিলাম, আগামীর নির্বাচন সর্বজনীন ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং জনগণ অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন; কিন্তু তখন যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা এই সরকারের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড পার্লামেন্টে কতটা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করবেন? তাই সংস্কারমূলক কর্মসূচি কারা বাস্তবায়ন করবেন, জাতির নিকট এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কোনো না কোনো পর্যায়ে জাতীয়ভাবে এটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
একদা কিছু বামপন্থি বা উগ্রপন্থি দল কয়েক দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। ঐ সময় তাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, এর বাস্তবায়ন কে করবেন? তখন উত্তরে তারা প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনি বা আপনারা করিবেন’। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, এটা কীভাবে সম্ভব? যেখানে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘চোরতন্ত্রের জন্য গালাগালি’ করা হয় বা হচ্ছে, তারা কীভাবে এত সুন্দর সুন্দর পরামর্শ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিজ স্কন্ধে তুলে নেবেন? যে দেশের রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতা ও ম্যাচ্যুরিটি প্রশ্নবিদ্ধ, সেই দেশে এমন আশঙ্কা দেখা দেওয়াটা অমূলক নয়।
এই যখন অবস্থা, তখন কীভাবে এই সব সংস্কার বা সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যায়, আজ যারা সরকারে আছেন, সেই চিন্তাভাবনাও তাদের থাকা প্রয়োজন। তারা যে একেবারেই এসব চিন্তা করছেন না, সে কথাই-বা আমরা কীভাবে বলি? অতএব, সংস্কারমূলক প্রস্তাব ঠিকমতো বাস্তবায়িত হবে কি না, তা-ও জাতিকে জানতে হবে।