বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইতিহাস—ঐতিহ্যকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আজকের এই স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে হাজারো ইতিহাস, সংগ্রাম ও কঠিন লড়াই। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণামূলক শিক্ষাগার। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য—বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও আবাসন ব্যবস্থাসহ আরো নানা সুযোগ—সুবিধা থাকে।
২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫’ পাশের মাধ্যমে বিদ্যাপীঠটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদিত হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ৭টি অনুষদ, দুটি ইনস্টিটিউট এবং ৩৮টি বিভাগ রয়েছে। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে এখানে এবং এখান থেকেই স্নাতক ও পেশাদার ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। এত এত অর্জনের পরেও অপ্রতুল আবাসনব্যবস্থা।
২০২২ সালে শুধু নারী আবাসিকদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি তার প্রথম আবাসিক হল—বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল চালু করে। এই হলে ৬২৪ জন ছাত্রীর আবাসনব্যবস্থা আছে, যা বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য অপর্যাপ্ত। কিন্তু ছাত্রদের জন্য একটি হলও বরাদ্দ করা হয়নি! এদিকে প্রায় তিন দশক ধরে প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হল। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালালেও হলগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জুলাই বিপ্লবের পর অনেক কিছুই স্থিতিশীল হতে শুরু করলেও জবিয়ানদের আবাসনব্যবস্থার কোনো গতি হয়নি। হল বিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়েও শিক্ষার্থীরা জুলাইয়ের আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। দেশের স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করতেও পিছপা হয়নি। কিন্তু দিন শেষে তাদের মাথা গোঁজার আবাসস্থলটাই নেই! দখলদারত্ব হতে হল ছিনিয়ে আনতে ব্যর্থ হওয়া প্রশাসনব্যবস্থার দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।
হল নেই, নেই থাকার কোনো সুব্যবস্থা। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে আবাসনের অনিশ্চয়তা সব থেকে চ্যালেঞ্জিং বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক বিরাট অংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। রাজধানীতে নিজের ভরণপোষণসহ বাসা ভাড়া বা হোস্টেল ভাড়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম দাবি থাকে আবাসন নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ—কষ্ট থেকে আন্দোলন জোরালো হয়। হল ব্যবস্থার সুনিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি যুক্ত হয় কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা। এখানেও প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে।
জবি শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. আগের প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় এনে ৭ দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করা।
২. শিক্ষা মন্ত্রালয় রূপরেখাসহ ঘোষণা করা যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে।
৩. অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে বিগত সরকারের সব চুক্তি বাতিল করা।
৪. সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা।
আবাসন পেলে একজন শিক্ষার্থীর ওপর থেকে খরচের বোঝা কিছু কমবে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের পথ চলাকে সহজ করার দায়ভার সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।