সাইফুল্লাহ আজম সবুজ
প্রতিটি দিনই তার নিজস্ব ইতিহাস বহন করে, যার কোনোটি গৌরবময় অর্জনের স্মারক, আবার কোনোটি বেদনার অধ্যায়। ১৮ নভেম্বর তেমনই একটি দিন, যা আমাদের সামনে ইতিহাসের আলোয় অতীতের গল্প বলে। আসুন, আজকের এই দিনটিকে আমরা খুঁটিয়ে দেখি—বিশ্বের নানা প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য।
দাসপ্রথার বিলোপের পথে এক বড় পদক্ষেপ (১৮৬৫)
আজকের দিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ১৮৬৫ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী অনুমোদিত হয়, যা দাসপ্রথাকে চিরতরে নিষিদ্ধ করে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা এই বর্বর প্রথা বিলোপের মাধ্যমে মানবজাতি ন্যায়ের পথে এক ধাপ এগিয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র আমেরিকান সমাজে নয়, বিশ্বব্যাপী দাসপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণার উৎস।
লাটভিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা (১৯১৮)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা শেষে ১৮ নভেম্বর লাটভিয়া নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে এই জাতি তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এ দিনটি লাটভিয়ার জন্য জাতির স্বপ্নপূরণের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
মিকি মাউসের আত্মপ্রকাশ (১৯২৮)
ডিজনির অ্যানিমেটেড জগতে বিপ্লবী সংযোজন মিকি মাউস আজকের দিনেই প্রথমবারের মতো দর্শকদের সামনে আসে। ‘স্টিমবোট উইলি’ নামের সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্রে মিকির আত্মপ্রকাশ কেবল ডিজনির নয়, বরং পুরো অ্যানিমেশন শিল্পের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। মিকি মাউস সেই দিন থেকে কেবল একটি চরিত্র নয়, বরং এক বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আইকন।
জনস্টাউন ট্র্যাজেডি (১৯৭৮)
এই দিনেই ঘটে এক মর্মান্তিক গণহত্যার ঘটনা। গায়ানার জনস্টাউন নামক জায়গায় ধর্মীয় নেতা জিম জোনসের প্ররোচনায় ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ গণআত্মহত্যা করে। এটি বিশ্ববাসীকে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস এবং নেতিবাচক মতবাদের বিপজ্জনক পরিণতি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১৮ নভেম্বর
মুক্তিযুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন (১৯৭১)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৮ নভেম্বর ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান চালায়। বিজয়ের মাত্র এক মাস আগে এই দিনটির কৌশলগত সাফল্য স্বাধীনতার পথকে সুগম করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এই গল্প আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
সাহিত্যের অনন্য অর্জন (২০০২)
বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে ১৮ নভেম্বর স্মরণীয় হয়ে আছে। এই দিনে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন একুশে পদক লাভ করেন। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষার সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তিনি তার লেখায় সমাজের অসাম্য, বৈষম্য ও মানবিক সংকটকে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন, যা বাঙালি সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব: জন্ম ও মৃত্যু
উইলিয়াম শেকলটন (জন্ম: ১৮৩৬)
বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিযাত্রী উইলিয়াম শেকলটনের নেতৃত্বে পরিচালিত অ্যান্টার্কটিক অভিযানগুলো সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার অসীম ধৈর্য ও দৃঢ়তা আজও পৃথিবীজুড়ে অনুপ্রেরণার উৎস।
অ্যালান শেপার্ড (জন্ম: ১৯২৩)
নাসার একজন প্রখ্যাত নভোচারী অ্যালান শেপার্ড চাঁদে পা রাখা প্রথম আমেরিকান। তার এই দুঃসাহসিক অভিযানের মাধ্যমে মানবজাতি মহাকাশ জয়ের নতুন দিগন্তে পা রাখে।