শীত মৌসুম দেশের কিছু মানুষের জন্য আরামদায়ক হলেও বেশির ভাগ মানুষের জন্য তা বেদনার, দুর্ভোগের। শীতের আমেজ কেবল সমাজের অভিজাত শ্রেণির মানুষের জন্যই স্বস্তিদায়ক। এ সময়ে তারা নিজেদের উষ্ণতায় জড়িয়ে আত্মতৃপ্তি অনুভব করে। কিন্তু যারা পথশিশু, দরিদ্র, নিঃস্ব ও অসহায়, তাদেরকে এই সময়টা পার করতে হয় অনেক কষ্ট ও যাতনার মধ্য দিয়ে।
শীতকালে সব থেকে বেশি কষ্টে থাকে পথশিশুরা। তারা আমাদের সমাজেরই অংশ। অথচ গরম কাপড়ের অভাবে শীত মৌসুমে তাদের অবস্থা হয়ে ওঠে সঙ্গিন। যেখানে একবেলা খাবারের জোগাড় করাই তাদের কাছে কঠিন, সেখানে শীতের উষ্ণ কাপড় কেনা তাদের জন্য যেন বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়! ফলে শীতের কুয়াশামাখা রাতে তারা কাতরাতে থাকে। শীতের প্রকোপ সহ্য করতে না পেরে অকালে মৃত্যুবরণ করে অনেকে। একইভাবে শীত পার করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় বৃদ্ধদেরকেও। বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তারা।
শীত এলে আমরা একধরনের পাখিদের আওয়াজ শুনতে পাই। যাকে আমরা অতিথি পাখি বলে সম্বোধন করি। অতিথি পাখিরা সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসে কম তাপমাত্রার শীতার্ত দেশগুলোতে, যাতে নিজেদের জীবনকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের সমাজে পরম ধর্ম হলো পরিবারে অতিথি এলে সঠিকভাবে আপ্যায়ন ও পরিচর্যা করা। তবে অতিথি পাখির বেলায় আমাদের আচরণ হয়ে ওঠে ভিন্ন! অতিথিকে আপ্যায়ন তো দূরের কথা, বরং তাদের শিকার করতে মরিয়া হয়ে উঠি আমরা। এটা খুবই দুঃখজনক।
শীতে পথশিশুদের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ, নিরাপদ আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা এবং পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু প্রতি বছর শীত মৌসুমে রাষ্ট্র বা বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে সমাজের ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষকে যে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আর তাই এ দায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরকেই।
বিত্তবান ব্যক্তিদের উচিত, শীতার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসা। পাশাপাশি অতিথি বা পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করতে হবে। চোরাকারবারী ও পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি আমাদের সবার সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতাই পারে অতিথি পাখিকে রক্ষা করতে। নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকারের মতো অনৈতিক কাজ বর্জন করতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ