বিশ্বের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই আশীর্বাদ অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপেও পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ভরল সমাজসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অনলাইন জুয়ায় ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের জন্য নেতিবাচক। কারণ, যে কোনো ধরনের ‘জুয়া খেলা’ সুষ্ঠু সমাজের পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ।
অনলাইন জুয়ায় আসক্তি ব্যক্তিগত সংকটের পাশাপাশি পুরে পরিবারকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি করে তোলে। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েন। রাত জেগে জুয়ায় মগ্ন থাকার কারণে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্ত্রোর ওপরও পড়ে ক্ষতিকর প্রভাব। পাশাপাশি সমাজের মানুষ জুয়াড়িকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। কারণ, জুয়া খেলার সৌরাত্মো সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে এবং দেখা দেয় নানা সামাজিক অস্থিরতা।

বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার আসক্তি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বহরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হচ্ছে। এসব পরিসংখ্যান আমাদের সামনে অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অনলাইন জুয়ার প্রধান শিকার। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং ওয়েব প্ল্যাটফরমওলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার তাদের জুয়ার প্রতি আকৃষ্ট করছে। অনেক সময় নিজের অজান্তেই শিক্ষার্থীরা এতে জড়িয়ে পড়ছেন, যা তার নিজের পরিবারের জন্য তো বটেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও হয়ে উঠছে বড় হুমকি।
এ অবস্থায় অনলাইন জুয়ার লাগাম টেনে ধরতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রথমত, অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্ত ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করতে হবে। এসব গ্লাটফরন যারা পরিচালনা করছে, তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। আইপিএল ও বিপিএলের মতো জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট চলাকালে জুয়ার আসর বসে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ আছে। এসব কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনতে হবে। অভিযুক্তদের বিরদ্ধে আইন প্রয়োগে রাখা যাবে না কোনো ধরনের শিথিলতা। বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল পেমেন্ট সেবার মাধ্যমেও অনলাইন জুয়ার লেনদেন চলে বলে জানা যায়। এসব ক্ষেত্রেও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সয়িত্ব নিতে হবে সবাইকে। শিক্ষকদের উচিত হবে, শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতন করা। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে জুয়ার দৌরাত্ম্য বন্ধে সবচেয়ে বেশি জরুরি অভিভাবকদের সক্রিয়তা। সন্তানের প্রতি তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। সর্বোপরি, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের প্রশ্নে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক নেতারাও এগিয়ে আসতে পারেন এ বিষয়ে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন জুয়ার কুফল নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি লিডারদের উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়েই থাকবে, যদি আমরা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করি। আর তাই ফালাইন জুয়ার মতো ধ্বংসাত্মক আসক্তি থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকার, গগমাধান, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা মাড়া এই ভয়াবহ আসক্তি থেকে মুক্তি কোনোমতেই সম্ভব নয়।
পরিশেষে বলতে হয়, সমাজকে ফাংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান, এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।