উন্নয়নের নামে বনভূমি নিধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটা যেন বেড়েই চলেছে। শিল্পকারখানা নির্মাণ, জ্বালানিচাহিদা মেটানো, জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল তৈরি করতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত বনভূমি নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, বিভিন্ন চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যাপকহারে বনভূমি উজাড় করে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ব্যাপক মাত্রায় বন নিধনের ফলে জলবায়ুর ভারসাম্য হ্রাস, মাটি ক্ষয়, বন্যা, বন্য জীবন বিলুপ্তি এবং জনজীবনের মান হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও বন-জঙ্গলে বসবাসকারী জীবজন্তুরা আবাসস্থলের সমস্যায় ভুগছে।

আর্থিক ও পরিবেশগত উভয় দিক থেকেই বনের গুরুত্ব অবর্ণনীয়। পৃথিবীর মোট ভূমির ৩১ ভাগ জুড়ে রয়েছে বনভূমি। কিন্তু প্রতি বছর, ৭৫ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার (১৮.৭ মিলিয়ন একর) বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমির ক্ষতি ১২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসে সংঘটিত দাবানলে ৪০ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিরিতে কাঠ চোর চক্রের থাবায় উজাড় হচ্ছে বনভূমি।
যদিও মানুষেরই প্রয়োজনে এই মূল্যবান সম্পদ উজাড় করা হচ্ছে, তবে আমাদের চাহিদা পূরণ যেন আমাদের অস্তিত্বের বিলুপ্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টিপাত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি; যেমন :কাঠের বিকল্প হিসেবে যথাসম্ভব রডের ব্যবহার করা, রাস্তা ও রেললাইনের দুই পাশে, বাসা-বাড়ির ছাদে এবং বারান্দায় গাছ লাগানো, চাহিদা পূরণে কাঠের বিকল্প হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ আরো বেশ কিছু কাজ করতে পারি। তবেই আশা করা যায় বন সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়