আগুন একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, যা অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা অর্জন ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণ কেবল আগুন নেভানোর কৌশল শেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জীবন রক্ষা, সম্পদ সুরক্ষা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক ব্যক্তির, বিশেষত অফিস, কারখানা, বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবনের কর্মীদের অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা শিখতে পারে কিভাবে আগুন লাগলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয়, কোন ধরনের আগুনের ক্ষেত্রে কী ধরনের অগ্নি নির্বাপক ব্যবহার করতে হয়, এবং কিভাবে নিরাপদে স্থানত্যাগ করতে হয়।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দেশে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশে ১৯ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ২৬,৬৫৯-এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, যা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানতে পারবেন, ৯৯৯ অথবা ১০২ এবং স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের ফোন নাম্বারে কল করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। আগুনের ধরন বুঝে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করার ব্যাপারেও জানতে পারবেন।
সাধারণত সব ধরনের আগুন একইভাবে নেভানো যায় না। আগুনের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অগ্নি নির্বাপক ব্যবহার করতে হয়। যেমন : পানির মাধ্যমে সাধারণ আগুন (কাঠ, কাগজ) নেভানো যায়, তবে ইলেকট্রিক বা তেলজাতীয় আগুনে পানি ব্যবহার বিপজ্জনক। ফোম ব্যবহার করা হয় তরল দাহ্য পদার্থের আগুন নেভাতে। কার্বন ডাই অক্সাইড বা ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার ব্যবহার করা হয় বৈদ্যুতিক আগুনে এবং অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার শিখতে পারবে। যেমন: ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার হোস, অগ্নিনির্বাপক কম্বল ইত্যাদির সঠিক ব্যবহার জানা।
অনেক জায়গায় এগুলো থাকলেও, ব্যবহার না জানার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, যা সংকটময় মুহূর্তে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিশেষত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি।
অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা। সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারি। তাই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আগুনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে এখনই আমাদের সক্রিয় হতে হবে। আগুন লাগলে কেবল ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই প্রাথমিক অগ্নি নির্বাপক জ্ঞান থাকতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে অনেক প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব।
লেখক : শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়