মো: জামিন মিয়া
আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নানা কারণে বেশ আলোচিত। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস, যিনি দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়ছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী এবং অদ্ভুত নীতি গ্রহণের কারণে বেশ সমালোচিত।
শুরুতেই উল্লেখ করতে হয়, হোয়াইট হাউজে থাকা সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই ১৮৫৩ সালের পর থেকে এই দুই দল থেকে এসেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এবার কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন, নাকি দ্বিতীয় বারের মতো ট্রাম্পকে নির্বাচিত করবেন। বলে রাখা ভালো, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ ট্রাম্পকে নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। আর তাই বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের দিকে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশও সতর্ক নজর রাখছে।
প্রেসিডেন্ট শাসিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল বইকি। একজন প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পেলেই যে প্রেসিডেন্ট হবেন, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। বরং ইলেক্টোরাল কলেজের সর্বাধিক ভোট প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। এই পদ্ধতির কারণে দেশব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও পরাজিত হওয়ার বহু নজির রয়েছে। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আল গোরকে হারিয়েছিলেন জর্জ বুশ। অথচ বুশ তার থেকে ৫ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ট্রাম্প থেকে ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রয়োগ করা হয়। মার্কিন অন্যান্য নির্বাচনে এই পদ্ধতি ব্যবহারের নজির নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় মিডিয়ার ভূমিকাও ব্যাপক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি প্রচলিত বিষয় হলো, এখানকার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলো কোনো না কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে থাকে। প্রার্থীরা প্রতিটি নির্বাচনেই মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন। তবে এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার কথাও শোনা যাচ্ছে। এই অভিযোগের তীর রাশিয়ার দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে যে, ক্রেমলিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়কর কথা হলো, এআই-প্রচারণা ট্রাম্পের কাজ করছে পক্ষে। প্রসঙ্গত, পূর্বের দুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও পুতিন ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে সেসময় খবর রটেছিল।
ইলেক্টোরাল কলেজের সর্বাধিক ভোট প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। এই পদ্ধতির কারণে দেশব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও পরাজিত হওয়ার বহু নজির রয়েছে। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আল গোরকে হারিয়েছিলেন জর্জ বুশ। অথচ বুশ তার থেকে ৫ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ট্রাম্প থেকে ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হয়েছিলেন
যাহোক, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাওয়া আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতীয়-আমেরিকান ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর কারণ, ভারতীয়-আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়-আমেরিকান ভোটাদের মধ্যে সংখ্যায় অনেক এবং তারা রাজনৈতিকভাবে দেশটিতে বেশ সক্রিয়। কমলা হ্যারিস ২০২০ সালে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভান্সের স্ত্রী ঊষা ভান্সও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। সন্দেহ নেই যে, নির্বাচনে ভারতীয়-আমেরিকানদের ভোট বিভক্ত হবে। এদিকে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে আলোচনায় এসেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে ইহুদি লবি খুবই শক্তিশালী। বলতে গেলে, প্রতিবারের নির্বাচনেই এই গ্রুপটি জয়-পরাজয় নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সমর্থন পাওয়ায় হোয়াইট হাউস অধিপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রইলেন।
তবে ট্রাম্প অভিবাসী ও মুসলিম ভোটারদের সমর্থন হারাবেন এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘গর্ভপাত’ একটি অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই গর্ভপাতের বিপক্ষে এবং তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সুপ্রিম কোর্ট এই অধিকার রদ করে দিয়েছিলো। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই কমলা হ্যারিস নারী ভোটারদের সহানুভূতি বেশি পাবেন। বিশেষত, শিক্ষিত, শহুরে ও শহরতলির নারীরা তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি এবিসি নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, কমলা হ্যারিসকে ৪৮ শতাংশ মার্কিন ভোটার সমর্থন করছেন, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ। সবশেষ জরিপ রিপোর্টে এটাই পরিষ্কার হয়েছে যে, সুইং স্টেটগুলোতে হ্যারিস এবং ট্রাম্পের ব্যবধান খুবই কম। এতো কাছাকাছি ব্যবধান থাকায় কে জিতবেন, সেটি নিয়ে ভবিষ্যদ্ববাণী করা বেশ মুশকিল। এখন দেখার বিষয়, কমলা হ্যারিস জিতলে তিনি কি বাইডেনের দেখানো পথ অনুসরণ করবেন ? নাকি ‘বিশ্ববাদ নয়, আমেরিকাবাদ’ বিশ্বাস নিয়ে আবারও “মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” বলবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট