আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। এ দিনে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ সময়ের সাথে মিল রেখে পালিত হয় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহিদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
একটু অতীতে ফেরা যাক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি তাদের মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা তা স্বীকৃতি দেয় নি। শেষমেশ তীব্র গণআন্দোলনের মুখে পড়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয় তারও দু’বছর পর ১৯৫৬ সালে।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতে, বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষাকে পরিচিত করাতে আমাদের চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
একটা দেশের মাতৃভাষা এত সহজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ দেখার বিষয়, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের ছেলে-মেয়ে অধিকাংশই দেশের বাইরে থাকে, ইংরেজি ছাড়া তারা কথা বলতে পারে না! যারা দেশে থাকে, তাদের পড়ানো হয় ইংলিশ মিডিয়ামে। যারা পলিসি মেক করে, তাদের হাত ধরেই একটা জেনারেশন তৈরি হচ্ছে; যাদের সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক অতি অল্প। তারা হয়তো শহিদ মিনারে ভীড় জমিয়ে মহান শহীদদের শ্রদ্ধায় ফুল দেয়, কিন্তু পরক্ষণেই বাসায় গিয়ে ইংরেজি মুভি দেখে। এভাবেই কি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ ঘটা সম্ভব?
বিশ্ববিদ্যালগুলোতেও শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে কমেই চলেছে। বাংলায় মানসম্মত অ্যাকাডেমিক বইয়ের তালিকা খুবই কম। বাধ্য হয়ে ইংরেজি বুঝে-না বুঝে পড়তে হয়। যাদের কাজ বাংলা ভাষার সংরক্ষণ, পরিমার্জন ও বিকাশ ঘটানোর তারাই বাংলা ভাষার ব্যবহার সংকুচিত করছে। এখানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, অফিস-আদালতে ইংরেজির ব্যবহার ও হাইকোর্টের অধিকাংশ রায়ও হয় ইংরেজিতে। মাঝে মাঝে কিছু বাংলা শোনা গেলেও সেটা খুবই কম।
সুতরাং প্রশ্ন ওঠা অপ্রাসঙ্গিক নয়, তবে কি এদেশে বাংলা ভাষাটা কেবল আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের, গরিবদের, চাষাভুষাদের, নিম্নবর্গের মানুষদের?
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইলঃ johurulislam313055@gmail.com
(এই লেখা লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। এ সংক্রান্ত যাবতীয় দায়ভার লেখকের ওপর বর্তাবে এবং এর জন্য দৈনিক মূলধারা কোনোক্রমেই দায়ী নয়। )