বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক আসামিকে গুম করে বন্দি রাখা অবস্থায় তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করার প্রমাণ পেয়েছে প্রসিকিউশন। মর্মান্তিক কথা হলো, ভুক্তভোগী ঐ স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করা হয়। কী বর্বর এক সমাজে বাস করছি আমরা!
কুখ্যাত আলেপ উদ্দিনের বিষয়ে জানা গেছে, অসংখ্য মানুষকে গুম এবং নির্যাতনের সাথে জড়িত তিনি। বহু মানুষকে অপহরণ, গুম করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিলেন। তাদের নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করা হতো। ইলেকট্রিক শক দেওয়া, চোখ বেঁধে রাখা, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো, বিদ্যুতায়িত করার মতো নারকীয় নির্যাতন চালানো হতো বন্দীরের ওপর। সবচেয়ে মারাত্মক যেটা করেছিলেন, একজন আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে তার স্বামীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করেন। এই তথ্য প্রমাণাদি প্রসিকিউশনের কাছে এসেছে। এ রকম নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম অপরাধ সমাজের জন্য কতটা অশনিসংকেত, সচেতন ব্যক্তিমাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন।
আলেপ উদ্দিনের কুকর্মের রেশ কাটতে না কাটতেই টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ইস্যুটি নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দিন কয়েক আগে একটি চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে, যা এতোদিন আড়ালেই ছিল। তবে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দায়েরের পর বিষয়টি সামনে আসে। জানা যায়, গভীর রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ এলাকায় বাসের মধ্যে ৮-৯ জন ডাকাত একসঙ্গে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রুপা ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।
বস্তুত, এ ধরনের অপকর্ম বা দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কখনো ব্যক্তির এককভাবে, আবার কখনোবা সংবদ্ধ অপকর্ম করতে দেখা যায়। বিশ্বের সব সমাজেই অন্যায়, অপরাধ আছে। এটা স্বাভাবকি প্রবণতা। কিন্তু যদি কোনো সমাজে অপরাধের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়, তাহলে সেই জাতির ক্রমাবনতি অবধারিত। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য; ভবিতব্য।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সবাই যে যার মতো আইন ‘হাতে তুলে’ নিচ্ছেন! সমাজের জন্য এটা আদৌ ভালো লক্ষণ নয়। সব দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে, কিন্তু সেই অবস্থায় সবাইকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। জনগণকে দায়িত্বশীল হতে হয়, সরকারকে হতে হয় সিদ্ধহস্ত। আর রাজনৈতিক মহলগুলোকে এমন আচরণ করতে হয়, যেন কোনোমতেই পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে না ওঠে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সেই চিত্র কি আমরা দেখতে পাচ্ছি?
আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করছি আমরা। মহান এই দিবসটি পালন করছে গোটা বিশ্ব। অন্তত এই একটি দিনকে আমরা ‘আমাদের একান্ত’ হিসেবে পেয়েছি। বিশ্বে এই অর্জন বিরল! একুশ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেয়। একুশ শিক্ষা দেয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। একুশের এই শিক্ষাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার মূল্যবোধের শিক্ষা। কোনো সন্দেহ নেই, মূল্যবোধের শিক্ষার অভাবের কারণেই সমাজে বিশৃঙ্খলা ঘটছে। অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সুতরাং, আজকের এই মহান দিনে আমাদের শপথ হোক আত্মপ্রত্যয়ের। শপথ হোক মূল্যবোধের শিক্ষা গ্রহণের। দেশ ও জাতিকে কেবল এই শিক্ষাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। মনুষ্যত্বের শিক্ষাই সবচেয়ে মূল্যবান। সবাইকে মনুষ্যত্বের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।