প্রশংসা কিংবা বাহবা পেতে কার না ভালো লাগে? মানুষ প্রশংসা পেতে ভালোবাসে। একজন মানুষের ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করা হলে হয়তো ধীরে ধীরে একটা সময় সে তার খারাপ দিকগুলো পরিহার করতে শুরু করে৷ কারণ, প্রশংসা মানুষের ভেতরে এক অজানা উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দের জন্ম দেয়।
আমাদের দেশের মানুষ জাতি হিসেবে খুবই দুঃখী। একটু ভালো থাকতে নানা সময়ে লড়াই-সংগ্রাম পর্যন্ত করেছে। শাসকের পালা বদল ঘটেছে বটে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এদেশের বহু মানুষ এখনো বছরে ১ বার ও গরুর মাংস কিংবা ইলিশের স্বাদ নিতে পারে না। সে সামর্থ্য কিংবা সক্ষমতা দূরে থাক, নিত্যপণ্য কেনার সামর্থ্যটুকুও দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যমতে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাংলার মানুষ মেপেজুপে খাবার খাওয়ার অভ্যাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাছের বাজারের সামনে দিয়ে হেটে গেলেও ইলিশের দিকে নজর দেওয়া বারণ! মানুষের নাগালের বাইরে থাকা এসব মাছ-মাংস কিংবা অন্যান্য বিলাসী খাদ্য সামগ্রী এবার জনসাধারণের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে নামকরা সব সুপারশপ! একটির দেখাদেখি অন্যরাও তাদের ব্যবসায় প্রতিনিয়ত এমন নতুন নতুন কম্বো অফার সংযোজন করছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। একটু মুনাফা করুক তাতে দোষ নেই, এরপরও মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হোক।
কিন্তু অন্য কথাও আছে। অনেকেই স্যোশাল মিডিয়াতে সমালোচনা করতেও পিছিয়ে নেই। কেউ কেউ বলছেন, ১৬০ টাকায় ২০০ গ্রাম মাংস বিক্রি করলে দিনশেষে তা ৭৫০ টাকা কেজি দরে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের কোনো মাংসের দোকানে কেউ চাইলেও আধা-কেজি মাংস কিনতে পারেন না। সে সুযোগ নেই। অথচ সুপারশপগুলো স্ব-উদ্যোগে এত অল্প পরিমাণ মাংস বা মাছের টুকরো পিস বিক্রির যে ব্যবস্থা চালু করেছে তা প্রশংসা না করে নিন্দার ঝড় তোলা নিতান্তই অকৃতজ্ঞতার পরিচয়।
অতএব, মানুষের খারাপ দিকগুলোকে পাত্তা না দিয়ে ভালো কাজের প্রশংসা করার মন-মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উৎসাহিত হবে এবং আরো বেশি ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে, সবকিছু নাগালের মধ্যে আসবে। তবে ভালো কাজ করতে যেয়ে টুকটাক ভুল হয়ে গেলে সেগুলোকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে গঠনমূলক আলোচনা করা যেতে পারে, কর্তৃপক্ষকে জানাতেও দোষ নেই। তবে স্যোশাল মিডিয়াতে এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে দিয়ে কারো সুনাম ক্ষুণ্ন করার আগে দু’বার ভাবা উচিত।
লেখক:
আবু মো. ফজলে রোহান
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: amfrohan@gmail.com