রিয়াদ হোসেন
যত্রতত্র পলিথিনের ব্যবহারে বিপর্যস্ত পুরো পরিবেশ। হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। দাম কম এবং হাতের নাগালে পাওয়ায় পণ্য বহনের জন্য ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় পলিথিন ব্যাগ অন্যতম। কাঁচামাল থেকে মাছ কিংবা মুদি পণ্যÑকোনো কিছু কিনলেই অনেকটা অবধারিতভাবে প্রয়োজন পড়ে পলিথিনের। তবে পরিবেশের উপর পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অজানা নয়। পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি যে তার নিজস্বতা হারাচ্ছে কিংবা অদূর ভবিষ্যতে আমরা যে ভয়াবহতার সম্মুখীন হতে চলেছি, তা নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যাথা নেই। তবে যুতসই কোনো ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ হলে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার থেকে সরে আসা সম্ভব।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ রক্ষার কথা চিন্তা করে পলিথিনসহ প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। চলতি মাসের শুরু থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় এবং জেলা শহরের বাজারগুলোতে কিছুটা কমতে শুরু করেছে পলিথিনের ব্যবহার। প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করে পলিথিনের ব্যবহার খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলেও তা পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এতে অবশ্য সময় লাগবে স্বাভাবিকভাবেই।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। হাইকোর্ট ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ও প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন কার্যকর হয়নি। এর পিছনে আমাদের অসচেতনতা, প্রশাসনের গাফিলতি আর কতৃপক্ষের উদাসীনতা মূল কারণ ছিল। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের ভ্রামম্যান আদালত পরিচালনা করে বাজার, রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলকে জরিমানা করতে দেখা গেলেও উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পলিথিনের ব্যবহার আবারো অবাধে বাড়তে থাকে। তাই পলিথিনের এই অবাধ ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে শুধু আইন তৈরী বা বাজার মনিটরিং করলেই তা ফলপ্রসূ হবে না। বরং যেখান থেকে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরী হচ্ছে এসব কারখানা আগে বন্ধ করতে হবে। পলিথিন ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগকে সহজলভ্য করে তোলাটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে পলিথিনের দামে যাতে পাটের ব্যাগ পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেও কোনো সমাধান করতে পারিনি বিগত সরকারগুলো। এজন্য পাটের ব্যাগের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনে পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে এসব ব্যাগ উৎপাদনকারীদের ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি, অনেকে কাপড়ের তৈরী ব্যাগ ব্যবহার করছেন। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও আগ্রহ তৈরী হচ্ছে।
বস্তুত, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল পলিথিন মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য বাধ্য হয়ে সরকারের নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে—এমন চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে বরং নিজেদের স্বার্থে, পরিবেশ বাঁচানোর লক্ষ্যে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি সমাজ উপহার দিতেই আমাদের পলিথিন বন্ধের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। তবে একদিকে যেমন সরকারের পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, তেমনিভাবে নিজ জায়গা থেকে সচেতন হওয়াটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।