ইমরান ফয়সাল
কারিগরি শিক্ষা বলতে এমন এক শিক্ষাকে বুঝায়, যা আমাদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। যা একজন ছাত্রকে বিশেষ কোনো শিল্প, প্রযুক্তি বা কর্মক্ষেত্রে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বর্তমান পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রথমে আমাদেরকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হতে হবে। তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
কারিগরি শিক্ষা আমাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একজন কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি সাধারণত যেকোনো সময় যেকোনো কাজে যোগ দিতে সক্ষমতা অর্জন করে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন কর্মমুখী শিক্ষার দক্ষতা অর্জিত হয় এবং অপরদিকে যুবকদের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। যারা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তারা তাদের দক্ষতাকে ব্যবহার করে নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এর ফলস্বরূপ তারা প্রযুক্তি ভিত্তিক কোনো কাজ নতুন গতিতে শুরু করতে পারে। একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক বা ওয়েব ডেভেলপার তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, কারিগরি শিক্ষা তাদের জীবনে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক হতে পারে।
পৃথিবীর অনেক দেশ এখন কারিগরি শিক্ষার প্রতি খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সরকার ব্যাপকভাবে বরাদ্দ দিচ্ছে, যার ফলে তাদের শ্রমবাজার অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এ ধরনের দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকা যায়। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।তাই নতুন প্রজন্মের মধ্যেও আধুনিক প্রযুক্তি শেখার দক্ষতা থাকা উচিত। কেননা কারিগরি শিক্ষা মানুষকে নতুন প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শেখায়, যা একটি দেশের উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন।
যখন মানুষ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তখন তাদের উপার্জনের পথ সুগম হয়। এর ফলে দারিদ্র্যতা হ্রাস পায় এবং আর্থিক অবস্থা ও সচল হয়। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া সহজতর হওয়ার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, যা দারিদ্র্যতার হার কমানোর জন্য অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতি সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত না। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য একাডেমিক শিক্ষা কঠিনও হতে পারে, কিন্তু তারা কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে তাদের প্রকৃত প্রতিভা এবং দক্ষতা বের করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা শিক্ষার আরেকটি বিকল্প পথ অনুসরণ করতে পারে। এছাড়া বর্তমানে চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা ছাত্রদের কর্মজীবনে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য সরকার এবং সমাজের কাছে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং সরকার ও রাষ্ট্রের উচিত কারিগরি শিক্ষায় অধিকতর নজর দেয়া, যাতে বেশি বেশি মানুষ কারিগরি শিক্ষা লাভ করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
লেখক : শিক্ষার্থী: ঢাকা কলেজ, ঢাকা
ই-মেইল: imranfaisal4434@gmail.com