পরিবার থেকে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে। এরপর প্রকৃতি থেকে, চারপাশের পরিবেশ থেকে, আস্তে আস্তে সে সবরকম প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে উঠে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠে। শিশুকে ছোটবেলা থেকে যা শিক্ষা দেবে তার পরিবার এবং চারপাশের পরিবেশ, সে তা-ই শিখবে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা যা দেখে, তা শিখতে চেষ্টা করে। শিশুদের জীবনের প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে তার মা। মায়ের থেকেই শিশু সভ্যতা, ভদ্রতা, আদর্শ এবং আচার-আচরণ শিখে থাকে।
নৈতিক চরিত্র শিশুদের ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠে তার নিজ নিজ পরিবার থেকে। ভালো-মন্দের ফারাক শিখতে পারে বড়দের থেকে। এটা একজন শিশুকে আদর্শ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। বাবা-মায়ের এক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা পালন করতে হয়। বাবা-মা থেকে শিশুরা ইতিবাচক দিকগুলো যেমন শেখে, ঠিক একইভাবে নেতিবাচক দিকগুলোও প্রবলভাবে অনুভব করে এবং তার মস্তিষ্কে ধারণ করে। বলা চলে, মা-ই একজন শিশুর উত্তম প্রশিক্ষক আর বাবা হলেন পথপ্রদর্শক।
বর্তমান যুগ ইলেকট্রনিক যুগ। স্মার্ট ফোন, কমপিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি এখন প্রায় প্রতিটি ঘরে আছে। ফলে পরিবারের বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও এই ডিভাইসগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। শিশুদের জন্য এইসব ইন্টারনেটসেবা বা ইলেকট্রনিক সামগ্রী উপকার যতটা করে, তার চেয়েও বেশি করে ক্ষতির সম্মুখীন। এমন অনেক পরিবার আছে, শিশুদের খাবার খাওয়ানোর জন্য হলেও শিশুর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় স্মার্ট ফোন। না হলে তাদের আদরের ছোট্ট সোনামণি খাবার খেতে চায় না। এটা তাদের জন্য এতটাই ক্ষতিকারক, যা শিশুর মস্তিষ্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কিন্তু অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন না অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ফলে চোখের ক্ষতি হচ্ছে। শিশুরা হয়ে উঠেছে গৃহবন্দি।
আগে যেখানে একটা শিশু খেলাধুলা বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকতে পছন্দ করত, বর্তমানে তার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে সমাজে। প্রতিটি শিশু খুব ছোটবেলা থেকেই তাদের নিজস্ব গ্লিতে সীমাবদ্ধ থাকছে। বড় হতে হতে সেভাবে এখন আর কারো সঙ্গে মিশছে না। খেলাধুলা করা, বইপড়া, সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে বেশি পছন্দ করছে। নিজেদের আটকে রাখছে সারাক্ষণ ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। আগে একটা শিশু পরিবারের বড়দের কাছে গল্প শোনার বাহানা করত। বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদির থেকে গল্প শুনতে না পারলে খাবার না-খাওয়ার জিদ করত। নতুন নতুন শিক্ষামূলক বিষয়ে জানার আগ্রহ দেখাত, এটা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। স্মার্ট ফোন ও অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার তার ফলে।
স্মার্ট ফোন নীরব ঘাতক হয়ে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। হয়ে পড়ছে তারা বই বিমুখ। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য শিশুদের হাতে স্মার্ট ফোন নয়, তাদের হাতে দিতে হবে বই। বইয়ের মধ্যেই তারা পাবে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা। বইয়ের মধ্যে সাঁতার কেটে যেখানে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করা যায়, সেরকম বই পড়তে দিতে হবে শিশুদের। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে তাদের।
যার যার পরিবারের দায়ভার সামলানোর দায়িত্ব তার তার। একইভাবে সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার দায়িত্বও। তাদের ভবিষ্যত্ নষ্ট হয়, এমন কিছু নিশ্চয়ই কাম্য হতে পারে না। স্মার্ট ফোনের ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তানের মধ্যে কোন কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে, তার একটা তালিকা তৈরি করে তাকে সতর্ক করতে হরে। সময় ফুরিয়ে গেলে তখন আর আফসোস করেও লাভ হবে না।
লেখক : কুমিল্লা থেকে