প্রতি বছর আমাদের দেশে নানা উত্সব বিশেষ করে থার্টিফার্স্ট নাইট, বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় উত্সবে আতশবাজি, ফানুস ও অন্যান্য শব্দবাজি নিয়ে মাতামাতি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে ঢাকা শহরে থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপনকে ঘিরে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তবে, এসব আনন্দের পেছনে যে প্রাকৃতিক ও সামাজিক ক্ষতি লুকিয়ে রয়েছে, তা আমরা অনেক সময় তেমন একটা আমলে নেই না। আতশবাজি ও ফানুসের ব্যবহারের কারণে যে পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে সেদিকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না।
আতশবাজি যখন আকাশে বিস্ফোরিত হয়, তখন প্রচণ্ড শব্দ তৈরি হয় যা শব্দদূষণের সৃষ্টি করে। এই শব্দদূষণ কেবল মানুষের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং পশু, পাখি ও গৃহপালিত প্রাণীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পাখি আতশবাজির তীব্র শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এলোমেলো ভাবে উড়তে থাকে, আতশবাজির আঘাতে আহত হয় এবং অনেক পাখি মারাও যায়। এছাড়া আতশবাজির মাধ্যমে যে বিষাক্ত গ্যাস এবং ধোঁয়া পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে, তা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ক্ষতিকর পদার্থ বাতাসে মিশে গিয়ে শ্বাসতন্ত্রের নানা সমস্যা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষের জন্য।
এছাড়া, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো মাটিতেও জমা হতে পারে, যা কৃষিপণ্য ও জলসম্পদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি এটি জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতিসাধন করে, কারণ অনেক ছোট প্রাণী এই রাসায়নিক পদার্থের কারণে মারা যেতে পারে। ফানুসের ব্যবহারও খুবই বিপজ্জনক। ফানুস উড়ানোর সময় বাতাসের প্রবাহে তা আশপাশের বাড়িঘর, গাছপালা বা অন্যান্য সম্পত্তির ক্ষতি করতে পারে। কখনো কখনো, ফানুসের আগুন লাগার কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
আমাদের দেশে ফানুসের কারণে বহু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কথা শোনা যায়, যার মধ্যে অনেকেই প্রাণ হারায় বা গুরুতরভাবে আহত হয়। বিশেষ করে শীতকালে, যখন বাতাস শুষ্ক থাকে, তখন ফানুসের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া, আতশবাজি ও ফানুসের ব্যবহার আমাদের সমাজে একটি অস্বাস্থ্যকর সংস্কৃতি তৈরি করে। যেখানে প্রতিবেশীদের আরাম, শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট হয়। বিশেষত সন্ধ্যা বা গভীর রাতে যখন আতশবাজি ও ফানুসের ব্যবহার বেড়ে যায়, তখন এটি অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এমনকি অনেক সময় এটি মানসিক সমস্যারও কারণ হতে পারে, বিশেষত PTSD (Post-Traumatic Stress Disorder) আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য। এসব সমস্যা ও ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের সচেতন হতে হবে।
আতশবাজি ও ফানুসের ব্যবহার পরিহার করা আমাদের জন্য এখন সময়ের দাবি। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনও এর বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা যদি আমাদের একে অন্যকে বুঝাতে পারি যে, আনন্দ প্রকাশের জন্য আতশবাজি ও ফানুসের দরকার নেই, তবে সবার জীবনই নিরাপদ থাকবে।
আর মাত্র কয়েক দিন পর আসছে থার্টিফার্স্ট নাইট। আমরা ঐ রাতে আতশবাজি-ফানুস নিয়ে অপসংস্কৃতি চর্চা থেকে বিরত থাকি। আমাদের সবার দায়িত্ব পরিবেশ, প্রকৃতি ও সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এসব অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে ফানুস ও আতশবাজির ব্যবহার পরিহার করি এবং এক সুন্দর, শান্তিপূর্ণ সমাজ ও দেশ গড়ে তুলি।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
(এই লেখার সম্পূর্ণ দায়ভার লেখকের নিজের; দৈনিক মূলধারা এটি জনসমক্ষে তুলে ধরছে মাত্র । এর সঙ্গে দৈনিক মূলধারা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ফলে এ-সংক্রান্ত কোনো দায়-দায়িত্ব মূলধারা বা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত কেউই বহন করবে না।)