সমভূমির দেশ বাংলাদেশ। সেজন্য এদেশে স্থলপথের যোগাযোগ মাধ্যম সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। এদেশের সিংহভাগ জনগণ প্রতিনিয়ত স্থল পথে চলাচল করে থাকে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। খাল, বিল, নদীর উপর দিয়ে সেতু নির্মিত হয়েছে, ভাঙা সড়ক হয়েছে মসৃণ এতে যোগাযোগ বেড়েছে আর বহুগুণে। কিন্তু স্থল পথের উন্নয়নের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা। দুর্ঘটনা শব্দটি ছোট হলেও জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তর। দেশে প্রতিনিয়ত ছোট – বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ হারাচ্ছে বাবা, কেউ হারাচ্ছে মা, কেউ বা ভাই অথবা বোন। অনেকে নিজের চোখের সামনে সাজানো পরিবারকে হারাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যাক্তিদের জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার। কেউ হারায় পা, কেউ হাত, কেউ বা অন্য যেকোন শরীরের অঙ্গ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ৭ হাজার ৯শত ০২ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর তথ্য মতে, ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৪শত ৯৫ জন আহত হয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই যেনো থামছে না। বাংলাদেশ সড়ক কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ২০২৪ সালে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৯শত ৮১ জন এবং আহত হয়েছে ৫ হাজার ৯ শত ৬১ জন।
দেশে এই দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। বেশিরভাগ চালকদের নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, নেই লাইসেন্স। গতির মাধ্যমে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মনোভাব প্রায় সময় চালকদের মাঝে লক্ষ করা যায়। দেশে বেআইনি পরিবহনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের আইন অমান্য করার প্রতিযোগিতা। ফলস্বরূপ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আপনজন হারানোর বেদনার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। অনেক সড়ক পরিবহনের নেই যথাযথ ফিটনেস। প্রায় সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
সড়ক-মহাসড়কগুলো আজও অতীতের ন্যায় অভিভাবকহীন। প্রশাসনের নিরব অবস্থানে মহাসড়ক, উড়ালসেতুতে চলছে রিক্সা, নসিমন ব্যাটারিচালিত যান। এসকল যানবাহনের বেশির ভাগ চালক মহাসড়কে চলাচল করার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নয়। ফলশ্রুতিতে এসকল যানবাহন দুর্ঘটনার কারণ হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতশত প্রাণহানি ঘটার পরেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন উল্লেখযোগ্য শাস্তি কার্যকর করা হয়নি। নেই কোন জবাবদিহিতা। সবকিছু যেনো তদন্ত কমিটি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। শাস্তির বিধান থাকার পরেও শাস্তি প্রদান করা হয়না। দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক নেই পর্যাপ্ত প্রশাসনিক তৎপরতা। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইওয়ে পুলিশ।
সড়ক দুর্ঘটনার মত অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঘুমন্ত প্রশাসনকে যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় এনে জাগ্রত করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। চালকদের সড়ক আইন, নিয়ম সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে, বেআইনি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত যানবাহন গুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সড়ক আইন ভঙ্গকারীদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমানে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ প্রদান করতে হবে ও তদারকি বৃদ্ধি করা। চালক, যাত্রী, প্রশাসন এবং জনগণ সবাইকে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। উক্ত সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কার্যনির্বাহী সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিচার, কলাম ও কন্টেন্ট রাইটার্স।