সময় বহমান, আর ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন বছর আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। ২০২৫ সালের সূচনা যেন নতুন স্বপ্ন, আশা এবং চ্যালেঞ্জের হাতছানি। বছরটি আমাদের জন্য কেমন হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতির ওপর। তাই নতুন বছরে আমাদের সামনে যে বাধাগুলো রয়েছে, তা অতিক্রম করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ২০২৫ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে নানা সংকটে নিমজ্জিত, সেখানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি খাত এবং কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তিত হওয়া স্বাভাবিক।
পোশাকশিল্প আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেও এর বৈচিত্র্যহীনতা একসময় সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ফলে নতুন বছরে আমাদের উচিত হবে কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করা। বিশেষত, স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি আমাদের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালে এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত গ্রামীণ এবং শহুরে জীবনে প্রভাব ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা করতে হবে পরিবেশকে কেন্দ্র করে, যাতে উন্নয়ন এবং পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
সামাজিক ক্ষেত্রে, নারী ও শিশু অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষা খাতে উন্নয়ন আরো গতিশীল করার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সামিল করা সম্ভব। এছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সবার জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন ২০২৫ সালের জন্য একটি অপরিহার্য চাহিদা। নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নের গতি কমে যাবে। আমাদের উচিত রাজনৈতিক মতবিরোধ দূরে রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একযোগে কাজ করা।
২০২৫ আমাদের জন্য শুধুমাত্র নতুন সময় নয়, বরং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলার একটি সুযোগ। আমাদের উচিত হবে নিজের সামর্থ্যকে চিনতে পারা এবং নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। ব্যক্তিগতভাবে আমরা যদি সচেতন, সৎ এবং উদ্যমী হতে পারি, তাহলে সমষ্টিগতভাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব।
নতুন বছর আমাদের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। ২০২৫ সাল হবে এমন একটি বছর, আমরা অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে উদ্ভাসিত, উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে পারবো। প্রযুক্তি, শিক্ষা, রাজনীতি ও পরিবেশগত দিকগুলোকে একীভূত করে আমরা একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ধারায় প্রবেশ করেছি, যা ২০২৫ সালে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশ করবে। এজন্যই চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মতো, পঁচিশেও আমাদের হতে হবে সাহসী, ঐক্যবদ্ধ এবং সৃজনশীল। নতুন বছর শুরু হোক শান্তি, প্রগতি ও সম্মিলিত উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায় দিয়ে। নতুন বছরে প্রত্যাশা রইল, বাংলাদেশ তার স্বপ্ন এবং লক্ষ্যের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। আশা করা যায়, ২০২৫ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার বছর—যেখানে চ্যালেঞ্জগুলো হবে অর্জনের সিঁড়ি।
লেখক : প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি