৪ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর। ১৯৭১সালের ৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর। এর আগে টানটান উত্তেজনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধের ঘটনা ঘটে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে ১৯টি সম্মুখযুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ জেলার কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙালি। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাকিস্তানি হানাদারা।
জেলার প্রাণকেন্দ্র বাগবাড়িতে ছিল পাক হানাদারদের ক্যাম্প। এখান থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে নারকীয় হত্যা, ধর্ষণসহ অমানবিক তান্ডব চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার নর-নারীকে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন চালাত পাক হানাদাররা। পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে বাগবাড়িস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গর্তে পুঁতে ফেলতো এবং অনেককেই ফেলে দিত সে সময়ের খরস্রোত রহমতখালীতে।
পাকস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। স্মৃতি হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের লোহার পিলার। নারকীয় এসব হত্যাযজ্ঞের নিরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ী গণকবর, মাদাম ব্রিজ, পিয়ারাপুর ব্রিজ ও মজুপুরের কয়েকটি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ি।
বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে, বহু মানুষকে গুলি ও বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পাকস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। এতে শহীদ হন প্রায় ৪০ জন নিরস্ত্র মানুষ। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্র বলছে, ৭১’র ১ ডিসেম্বর থেকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে। এতে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। মুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর।
লেখক: জুনাইদ আল হাবিব। সাংবাদিক, ফিচার লেখক।